- দেহের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে পরিচ্ছদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যে পরিচ্ছদ ব্যক্তিত্ব ও দেহের সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, সে পরিচ্ছদ যত মূল্যবানই হোক না কেন তা বর্জনীয় হবে। আর ব্যক্তিত্বের সুন্দর বিকাশের জন্য প্রত্যেকের উচিত নিজেকে জানা
- প্রত্যেকেরই নিজের ধরন ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করা উচিত। দেহের বিভিন্ন পেশি ও অংশ বিশেষের গঠনভঙ্গিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে লক্ষ রাখা দরকার, যাতে পরিচ্ছদ বেশি আঁটসাঁট না হয়। বেশি আঁটসাঁট পোশাক সুরুচি ও সুক্ষ্ম সৌন্দর্যানুভূতির পরিচয় দেয় না বরং দেহের ত্রুটিগুলো এতে আরও প্রকট হয়ে ওঠে।
- পরিচ্ছদ নির্বাচন করার সময় খাটো, লম্বা, মোটা, পাতলা ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় খাটো ও মোটা মেয়েরা বড় বড় ছাপার শাড়ি পরে। এতে তাদের উচ্চতা আরও কমে যায় এবং তাকে আরও মোটা লাগে। এদের জন্য ছোট ছোট ছাপার কাপড় উপযোগী।
- পৃথিবীতে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যে কিছু কিছু সুন্দর দিক থাকে। যেমন— সুন্দর কোমর, দৈহিক উচ্চতা, সুন্দর স্বাস্থ্য ইত্যাদি। আবার কিছু কিছু ত্রুটিও দেখা যায়। যেমন- স্ফীত হিপ, প্রশস্ত কাঁধ, খাটো গ্ৰীবা ইত্যাদি। দেহের বিভিন্ন অংশের ত্রুটি সুপরিকল্পিত পোশাকের আকৃতির মাধ্যমে গোপন করে সুন্দর দিকগুলো প্রস্ফুটিত করে ব্যক্তিত্বকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়।
- ব্লাউজ বা কামিজে ইয়ক, চিকন টাক, কুঁচি, বুকে তালি, পকেট, চওড়া কলার ইত্যাদি ব্যবহার করে দেহের ত্রুটি ঢাকা যায়। বেশি স্ফীত বুক এবং প্রশস্ত কোমরের অধিকারীদের জন্য ঢিলেঢালা পোশাক উপযুক্ত। প্রশস্ত কোমরের ত্রুটি সুপরিকল্পিত মানানসই কোমর রেখার মাধ্যমেও ঢাকা যায় ।
- যাদের গ্রীবা খাটো তাদের জন্য ‘ভি’ বা ‘ইউ' আকৃতির গলার নকশা মানানসই। এদের জন্য ছোট গলা বা উঁচু কলার উপযুক্ত নয়। অন্যদিকে যাদের গ্রীবা লম্বা বা সরু তাদের জন্য ছোট গলা এবং উঁচু ফিটিং গলা বেশি মানানসই।
- মানুষের মুখের আকৃতি নানা রকম হয়। যেমন-লম্বা, গোল, চারকোনা, ডিম্বাকৃতি। ডিম্বাকৃতি মুখমণ্ডলই আদর্শ। এসব মুখাকৃতির মেয়েরা সব ধরনের গলার নকশাযুক্ত পোশাক বিনা দ্বিধায় নির্বাচন করতে পারে। যাদের মুখের আকৃতি চারকোনা বা গোলাকার তাদের ‘ভি’ আকৃতি এবং ‘ইউ’ আকৃতির গলার নকশা ব্যবহার করা ভালো। লম্বা মুখ হলে ছোট গলার নকশা মানানসই হয়। এ ধরনের মেয়েরা উঁচু কলারের জামা পরলে তাদের গ্রীবার সরু ভাব ঢাকা পড়ে ।
- অনেকের পেছনের দিকে ঘাড়ের কাছে মাংস উঁচু হয়ে থাকে। তা ঢাকার জন্য কেউ কেউ উঁচু কলার যুক্ত ব্লাউজ বা জামা পরে। কিন্তু এক্ষেত্রে সঠিক উপায় হচ্ছে ব্লাউজের গলার ছাঁটটিকে ওই মাংসপিণ্ডের ঠিক মাঝামাঝি স্থান দিয়ে নিয়ে আসা। এভাবে তৈরি ব্লাউজ পরলে ঘাড়ের কাছের ত্রুটি তত প্রকট হবে না ।
- চেহারার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আলংকারিক বস্তুও নির্বাচন করতে হবে। যেমন- লম্বা চেহারার মেয়ে যদি লম্বা কানের দুল কিংবা একটি লম্বা নেকলেস পরে, তাহলে তাকে আরও লম্বা মনে হবে।
কাজ – কোন ধরনের দেহাকৃতির জন্য কী ধরনের পোশাকের ডিজাইন হওয়া উচিত উল্লেখ কর।
পোশাকে জমিনের প্রভাব -কাপড়ের জমিন নানা ধরনের হয়। পশমি বস্ত্র নরম, রেশমি কাপড় দেখতে - উজ্জ্বল, স্যাটিন বস্ত্ৰ চকচকে এবং সুতি বস্ত্র দৃঢ় প্রকৃতির হয়। সুতি, রেশমি, পশমি ছাড়াও তসর, অর্গ্যান্ডি ইত্যাদি কাপড়েও অনেক জমিন দেখা যায়। বস্ত্রের জমিনের ভিন্নতার জন্য প্রতিটি পোশাক ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হয়। যেমন- নরম, মধ্যম, দৃঢ়, ওজনে ভারী, চকচকে, নিষ্প্রভ ইত্যাদি। জমিনের সুষ্ঠু ব্যবহার করে ব্যক্তি নিজেকে কিছুটা লম্বা বা খাটো, রোগা বা মোটাভাবে উপস্থাপন করতে পারে ।
১. জার্সি, শিফন ইত্যাদি নরম প্রকৃতির কাপড়। এসব কাপড়ের পোশাক শরীরের সাথে সেঁটে থাকে, ফলে শরীরের দোষ বা গুণ সহজে বোঝা যায়। নরম কাপড় পরিধানে আরাম অনুভূত হয় ।
২. মধ্যম ধরনের দৃঢ় প্রকৃতির কাপড়, যেমন- ডেনিম কাপড় শরীরের সাথে বেশি সেঁটে থাকে না, ফলে শরীরের দোষ সহজে বোঝা যায় না।
৩. দৃঢ় প্রকৃতির যেমন— ট্যাফেটা-জাতীয় কাপড়ে পরিধানকারীকে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মোটা দেখায় ৷
৪. ভারী যেমন— পশমি কাপড়ে আপাতদৃষ্টিতে দেহ বড় দেখায় ৷
৫. ফ্লানেল, ডেনিম প্রভৃতি নিষ্প্রভ জমিনের কাপড় বেশি আলো শোষণ করে, তাই এরূপ কাপড়ে কোনো বস্তু ছোট দেখায়। বয়স্ক ও মোটা মানুষের জন্য এরূপ বস্ত্র উপযোগী।
৬. চকচকে কাপড়ে আলোর প্রতিফলন হয় বলে পরিধানকারীকে বড় দেখায়। যেমন- সার্টিন, মারশেরাইজ
করা সুতির বস্ত্র ইত্যাদি। যেসব কাপড়ে ধাতব তন্তুর কাজ থাকে সেগুলোর জমিনও চকচকে হয় ।
লম্বা, রোগা ও অল্প বয়সীদের জন্য এমন জমিন মানানসই ।
সুগঠিত দেহাকৃতি অধিকারীরা সব ধরনের জমিনের পোশাকই পরতে পারে। ঋতু, দেহের আকৃতি ও বয়স ভেদে বস্ত্রের জমিন নির্বাচন করতে হয় ।
কাজ – পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কার জন্য কী ধরনের জমিনের বস্ত্র প্রয়োজন এবং কেন প্রয়োজন - উল্লেখ কর ।